স্বামী সন্তান পরিবার রেখে পাড়ি দিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। গিয়েছিলেন একটু ভালো থাকার জন্য। কিন্তু তার বদলে জুটেছে নির্যাতন, অমর্যাদা। সেই সাথে শ্রমের মূল্যও মেলেনি। কারো কারো ভাগ্যে জুটতো না দুবেলা খাবারও। সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরা নারীরা এভাবেই নির্যাতনের বর্ণনা করছে। অনেকে ফিরেছেন অনেকে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের ফিরিয়ে আনার দাবিও তুলেছেন।
সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা নারীরা জানাচ্ছেন তাদের উপর কিভাবে অমানুষিক নির্যাতন করা হতো। শারীরিক মানুসিক নির্যাতনের পাশাপাশি কারো কারো সাথে যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটতো।
সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা এক নারী শ্রমিক আকলিমা জানান, তিনি প্রতি মাসে এক হাজার রিয়েল চুক্তিতে গিয়েছেন কাজে। কিন্তু তাকে নির্যাতনের মুখে ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে। কোন টাকা পয়সা দেয়া হয়নি।
রোবিনা নামের আরেক নারী শ্রমিক জানান, তাকে শারিরিক নির্যাতনের পাশাপাশি বেশ কয়েকবার যৌন হেনাস্থা করার চেষ্টা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের সেফ হোমে। এরকম আশ্রয় নেয়া ১২০ জনকে নারী শ্রমিককে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি বিভাগ। এর মধ্যে মোট ৯০ জন নারীকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
সম্প্রতি ফেরত আসা গৃহকর্মী পেশায় নিয়জিত থাকা তসলিমা আক্তার জানান, তিনি যে বাড়িতে কাজ পেয়েছিলেন সেখানে লোক ছিল ৪৫ জন। যে বাড়িতে শ্রমিকদের কাজ করতে হয় সেখানে প্রায়ই তারা নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহ এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হন।
১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত শুধু সৌদি আরবেই ২ লাখ ৩৪ হাজার আটশোর বেশি নারী শ্রমিক কাজের জন্য যান। সম্প্রতিক সময়ে নারী শ্রমিকদের উপর চালানো নির্যাতনের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। এর আগেও এমন অভিযোগ ছিলো। তবে সম্প্রতি তা গণমাধ্যমের আলোচনায় উঠে এসেছে। প্রতি মাসেই ফিরে আসছে শতাধিক নারী শ্রমিক।
বাংলাদেশী অভিবাসী মহিলা শ্রমিকদের সংগঠনের (বমসার) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ছয়/সাত মাসে মাসে চার থেকে সাড়ে চার হাজার নারী শ্রমিক ফিরে এসেছেন।
এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করার দাবি তুললেও সরকার মনে করছে ভিন্ন কথা। মধ্যপ্রাচ্যে বড় শ্রমবাজারটি হারাতে চাইছে না এখনই।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্যাতনের যে অভিযোগ আসছে তা শতকরা ২০ ভাগ বাকি ৮০ ভাগই নিরাপদ রয়েছে।
এছাড়াও নিজেদের কিছু অদক্ষতার কথা তুলে ধরে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের অদক্ষতার বিষয়টিও আমরা আবিষ্কার করলাম। যারা গেছে তারা অনেকে ভাষা বোঝেনা। কথা বলতে না পারলেও নাকি তারা মারধর করে।’
এইসব মেয়েদের দক্ষতা বাড়ানোর এবং ভাষা প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।